অগ্নিকাণ্ডে ছিন্নভিন্ন তাহসিনের পরিবার

অনলাইন ডেক্স: চট্টগ্রামের বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাবা-মাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে তাহসিনের পরিবার। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাবা-মা মারা গেছেন, আর ভাই সোহান (১৮) ও বোন শাহীনা আক্তার (২২) আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

তাহসিনের পরিবারে ছিল পাঁচ সদস্য—বাবা, মা, বড় ভাই, বোন এবং সে নিজে। সংসারের হাল ধরতে বড় ভাই সোহান বাবার সঙ্গে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করত। কোনোভাবে দিন চলে যাচ্ছিল, কিন্তু এক অগ্নিকাণ্ড তাদের সবকিছু শেষ করে দিলো।

ভোর আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন সবাই গভীর ঘুমে। বের হওয়ার পথ না পেয়ে সবাই বাথরুমে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে তাদের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে যায়। প্রতিবেশী ফয়সালও তাদের বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হন এবং তিনিও এখন আইসিইউতে।

এই অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে গেছে শুধু তাহসিন (১৪), কারণ সে দিন দুয়েক আগে খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। কিন্তু তার আইসিইউতে থাকা ভাই-বোন এখনো জানে না যে বাবা-মা আর নেই।

তাহসিনের খালাতো ভাই ইকবাল বলেন,সকাল ৮টার দিকে খবর পাই যে আমার খালা-খালু আর নেই। ভাই-বোন দুইজনও আইসিইউতে, তাদের অবস্থাও ভালো না। তাহসিন আমাদের বাসায় ছিল, তাই বেঁচে গেছে। পুরো পরিবারটা শেষ হয়ে গেলো।”

তিনি আরও বলেন,সেমিপাকা ঘরে আগুন লাগে, কিন্তু সেই ঘরের কারও কিছু হয়নি। পাশের রুমে থাকা তারা বাথরুমে চলে যায়। শরীর পুড়ে যায়নি, কিন্তু তাপ আর ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আরেকজনও গুরুতর আহত হয়েছে।”

ইকবাল আরও জানান,আমাদের কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু পুলিশ পোস্টমর্টেম ছাড়া মরদেহ দিতে চাচ্ছে না। আমরা মরদেহ দ্রুত নিতে চাই, কিন্তু পুলিশ শুনছে না। লাশ এখনো মর্গে পড়ে আছে। পরিবারে আর কেউ রইলো না আমাদের ছাড়া।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এস খালেদ বলেন,
“আগুনে দগ্ধ পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়, এর মধ্যে দুইজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক, তাই তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন,তাদের শরীর পুড়ে যায়নি, কিন্তু ধোঁয়া ও তাপের কারণে শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া অবস্থার উন্নতি আশা করা যাচ্ছে না। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

এক মুহূর্তেই তাহসিনের গোটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন তার ভাই-বোনের জীবন-মৃত্যুর লড়াই চলছে। তাহসিনের স্বজনরা অসহায়, আর আইসিইউতে থাকা দুই ভাই-বোনের এখনো জানা হয়নি যে তাদের বাবা-মা আর নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *