ব্যাংকের চাকরি হারিয়ে সাকিবুল আলমের স্বপ্নভঙ্গ: অসহায় পুরো পরিবার

অনলাইন ডেক্স: মোহাম্মদ সাকিবুল আলমের স্বপ্ন ছিল একদিন বাবা-মাকে সপ্তাহে অন্তত একদিন মাছ-মাংস খাওয়াবেন। পড়ালেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কঠোর পরিশ্রমে জীবন কাটানো বাবাকে অবসর দেবেন। তার বিশ্বাস ছিল, পরিবারের জন্য একটি পাকা বাড়ি তৈরি করবেন এবং তার বিবাহযোগ্য বোনদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন আর বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পাচ্ছে না।অস্রু ঝরা চোখে এই বর্ণ্না করেন অসহায় সাকিবুল ।তিনি একান্ত সাক্ষাতে এই সব কথা বলেন ।

তিনি বলেন, আমাদেরকে এক সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছিল,আমাদের আগে আরো দুইটা ব্যাচ নিয়োগ দিয়েছিল জুলাই ৭ তারিখ ও মে’র ৫ তারিখ নিয়োগ দিয়েছিল।আমাদেরও সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল।আমার পোস্টিং ছিল খুলনা বাগেরহাট,জোরারগঞ্জ ব্যাঞ্চ।আমাদেরকে ছোট একটি মেসেজ দিয়ে নিয়োগ  বাতিল করে দেয়।এটা আমরা ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে আশা করি নাই।আমার পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ।

সাকিবুলের বাবা, একজন সামান্য কৃষক, আজও জীর্ণশীর্ণ ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলের চাকরির মাধ্যমে পরিবারের জীবনে পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। নিয়োগ বাতিলে  সেই আশা এক মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

ছেলেকে নিয়ে কি আশা করেছিলেন এমন প্রশ্নে সাকিবুলের বাবা বলেন, আমি কৃষি কাজ করে খাই,আমি মনে করেছি আমি পটিয়াবাসি হিসেবে আমার ছেলের চাকরিটা হলে আমি আমার ছেলের উপর নির্ভর করে থাকবো।হঠাৎ করে নিয়োগটা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন বসে আছি এই আশাই তাকে আবার চাকরিতে ডেকে পটিয়ার গৌরব আনবে বলে আশা করি। পরবর্তী যেন এই সিদ্ধান্ত হয় এই আশা করি।এস আলম মানুষ ভাল তারা সবকিছু আমাদেরকে দিয়েছে।এটা নিয়ে আমার আনন্দ ছিল কিন্তু এই আনন্দ বন্ধ হয়ে গেছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সাকিবুল ইসলামী ব্যাংকের খুলনা বাগেরহাট জোরারগঞ্জ শাখায় নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই ব্যাংক থেকে একটি ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়, তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

সাকিবুলের চাকরি হারানোর খবরে গোটা পরিবারে নেমে আসে দুশ্চিন্তার কালো ছায়া। সামান্য কৃষিকাজ করে সংসার চালানো বাবা আজ দিশেহারা। তার অসহায় দৃষ্টি যেন বলে দেয় সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা।

এমন পরিস্থিতিতে সংসার কিভাবে চলে এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিবুল আলম বলেন, আব্বু একটু অসুস্থ।আমার বড় চাচু আছে উনি সরকারি চাকরি করে উনি সহায়তা করে।আমি দুইটা-তিনটা টিউশন করি।এইগুলা দিয়ে তো হবে না।এইগুলো দিয়ে তো পুরো সংসার চলা যাবে না আমাদের সাথে অনেকেই যোগদান করেছিল,আমাদের কোন অপরাধ ছিলও না।আমাদের একটাই অপরাধ আমরা পটিয়ার মানুষ বলেই আমাদের নিয়োগ বাতিল করে দিছে।এটাই আমাদের অপরাধ হয়েছে।

একটি নিশ্চিত চাকরির আশায় দিন গুনছিলেন সাকিবুল। চাকরির বাতিলের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধু চট্টগ্রাম কিংবা পটিয়ার বাসিন্দা হওয়ার কারণেই কি আমার চাকরি চলে গেল? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে?”

সাকিবুলের গল্প শুধু একটি পরিবারের নয়। পটিয়া তথা চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে আজ একই রকম দুশ্চিন্তার গল্প শোনা যায়। চাকরি হারানো যুবকদের দীর্ঘশ্বাস যেন প্রতিটি পরিবারে এক নতুন দুঃখের অধ্যায় লিখছে। যেখানে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তরুণদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করছে, সেখানে ইসলামী ব্যাংকের এমন আচরণ স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

অনেকেই বলছেন, “যেখানে দেশের যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে এভাবে শত শত যুবককে চাকরি থেকে বঞ্চিত করে তাদের জীবন আরও অনিশ্চিত করা হচ্ছে কেন?”

সাকিবুলের পরিবার ও এলাকাবাসীর একটাই চাওয়া—তিনি যেন তার হারানো চাকরি ফিরে পান। তার বাবা-মা এবং বোনেরা যেন একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। এলাকাবাসী আশা করে, এ ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে এবং কোনো তরুণকেই আর এভাবে হতাশায় ডুবতে হবে না।

সাকিবুলের মতো স্বপ্নবান যুবকদের জীবন যেন অনিশ্চয়তার আঁধারে হারিয়ে না যায়, এই প্রত্যাশাই এখন সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *