ঘন ধোঁয়ার চাদরে আচ্ছন্ন হলিউড

অনলাইন ডেক্স: হলিউড এখন ঘন ধোঁয়ার চাদরে আচ্ছন্ন। উঁচু পাম গাছগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে ধোঁয়ার আবরণ এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। আগুনের কারণে আশপাশের রাস্তাগুলোতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এমন ধোঁয়ার মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে সবার। অনেকেই নিজের সোয়েটশার্ট দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছেন। স্যুটকেস ও ব্যাগ নিয়ে মানুষ ছুটছেন আশ্রয়ের খোঁজে।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সানসেটে দাবানলের সূত্রপাত ঘটে। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং হলিউডের একটি বড় অংশ ঘন ধোঁয়ার আচ্ছাদনে ঢেকে যায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মধ্যরাত পর্যন্ত দাবানল প্রায় ৬০ একর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

হলিউডের রাস্তাগুলোতে আতঙ্কিত মানুষের ভিড়। অনেকেই ঘরের পায়জামা পরা অবস্থায় বেরিয়ে এসেছেন। তাদের মুখ দেখে মনে হয়, এমন আকস্মিক ঘটনায় তারা এখনও বিস্মিত। প্রতিবেদকের চোখে দেখা যায়, মানুষ ঘর থেকে যা পেরেছেন তাই নিয়ে ছুটছেন।

এক নারী, আনা ওয়াল্ডম্যান, তার কুকুর নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছিলেন। ধোঁয়ার গন্ধ পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন আগুন তার ব্লকের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দ্রুত কিছু খাবার, কাপড়, কম্বল, এবং তার তিনটি ছোট কুকুরের খাবার নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসেন।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আনা বলেন, “আপনি কি আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন? আমরা কোথায় যাব? এখন কোন জায়গাটা নিরাপদ?”

এ সময় সাইরেন বাজছিল এবং হেলিকপ্টারগুলো দ্রুত বেগে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ধোঁয়া, আগুন আর আতঙ্কে ভরা এই পরিস্থিতি হলিউডের সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্লান্ত স্বরে আনা ওয়াল্ডম্যান বলেন, “আমি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না।” তার কথা শুনে মনে হয়, তিনি এখনও ঘটে যাওয়া ঘটনা পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি।

২৬ বছর বয়সী মাকায়লা জ্যাকসন তার দুই বছরের ছেলে রামারিকে কোলে নিয়ে রাস্তার কোণে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তারা গৃহহীনদের জন্য তৈরি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। তবে সেই আশ্রয়কেন্দ্রটি দাবানলের ঝুঁকিতে থাকায় তাদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়। মাকায়লা বলেন, “তারা শুধু আমাদের বেরিয়ে চলে যেতে বললো।”

মাকায়লা ও তার ছেলে হলিউড হাই স্কুলের দিকে যাচ্ছেন, যেখানে আরও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আগুনের তীব্রতা এবং দাবানলের বিস্তার এলাকাবাসীকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আগুনে ভস্মীভূত এলাকার কাছাকাছি রাস্তাগুলোর মধ্যে আইকনিক হলিউড বুলেভার্ডও রয়েছে, যেখানে হলিউড ওয়াক অব ফেম অবস্থিত। এখানে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কিছু মানুষ পালানোর জন্য উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।

ধ্বংসের চিহ্ন ফুটে উঠছে শহরের বিভিন্ন অংশে। কাছাকাছি ফ্রিওয়েগুলো থেকে আগুনের ভয়াবহতা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। অন্ধকারে দাবানল চারদিক উজ্জ্বল লাল আভায় আলোকিত করে রেখেছে।

তবে শহরের অপর প্রান্তে, যেন কিছুই ঘটেনি, সেখানে মানুষজন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তারা ডিনার খাচ্ছে, কেনাকাটা করছে এবং সন্ধ্যা কাটাচ্ছে। এই বিপরীত পরিস্থিতি শহরের দুটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে—একদিকে আতঙ্ক ও ধ্বংসের মিছিল, অন্যদিকে শান্ত ও স্বাভাবিক পরিবেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *