বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতায় গমের বাজার যেভাবে সামাল দিলো এস আলম গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:২০২১ সাল, সবেমাত্র শেষ হলো করোনা মহামারির ভয়াবহ একটি বছর। তার উপর, প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্যাহত হয়েছে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন। শুধু তাই নয়, সে সময়ে পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনেও আঘাত হেনেছে মহামারীর প্রাদুর্ভাব। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গমের আন্তর্জাতিক বাজার পুরোদমে অস্থিতিশীল। যার প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে দেশের খাদ্য ও নিত্যপণ্যের বাজারেও।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে গম ও গমজাত পণ্য আটা-ময়দার দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের অর্থবছরেও দেশে গম আমদানি হয়েছে চাহিদার চেয়ে কম। এতে বাজারে এখন গমের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার উৎপাদন খরচে। তবে সে সময়ে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে এসেছিলো, দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ এস আলম।

জানা যায়, ২০২০ সালে এস আলম গ্রুপ গম আমদানি করেছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে যখন বিশ্ব বাজারে হুহু করে গমের দাম বাড়ছিলো এবং বাংলাদেশে সংকট দেখা দিয়েছিলো। তখন, এস আলম গ্রুপ গমের আমদানি বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার টন গম আমদানি করে। সে সময়ে দেশের সংকটকালীন সময়ে এস আলম গ্রুপ দ্রুত আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ দেয়া এবং সবচেয়ে কম দামে পণ্য সরবরাহের নজির গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর মধ্যে ২০২২ সালে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।  বিশ্বের মোট চাহিদার ২৮ শতাংশ গম সরবরাহ হয় রাশিয়া-ইউক্রেন শস্য অঞ্চল থেকে। আর বাংলাদেশের গমের বাজারে প্রতি বছর ৩০/৩৫ লাখ টন পর্যন্ত গম আমদানি হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ফলে শুরু হয় গমের বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা। যার প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশেও। তবে এবারও এগিয়ে আসে এস আলম গ্রুপ। ২০২২ সালে আবারো ৫ লাখ ৩২ হাজার টন গম আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি এবং  সর্বশেষ ২০২৩ সালে গম আমদানি করে ৫ লাখ ২০ হাজার টন।

জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২০ লাখ টন গম আমদানি করেছে এস আলম গ্রুপ। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে ১ লাখ ১০ হাজার টন গম আমদানির পাশাপাশি আগামী ৬ মাসে আরও ২ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ, চলতি বছরও গম আমদানি ৫ লাখ ছাড়িয়ে যেত প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে বুকিং দেয়া সত্ত্বেও বিশ্ববাজার থেকে গম সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে এস আলম গ্রুপ। ফলে আমদানি প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ায় দেশের গম সহ আটা-ময়দার বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ির কাছে জানতে চাইলে তিনি  বলেন,,এক ভাগের চেয়ে বেশি গম সরবরাহ করে  থেকে এস আলম ।এস আলম গ্রুপ সরকার পরিবর্তেনের কারণে এলোমেল অবস্থায় পরে গিয়েছে। চিনি উৎপাদন বন্ধ ,তেলটাও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।এই অবস্থায় পুরো বাংলাদেশের প্রত্যেকটার পণ্যের অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ির বলেন,আমার মনে হয় এস আলমকে ব্যবসা করার সু্যোগ করে দেয় সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়িদের জন্য উপকার হবে।

বিশ্ববাজারে বর্তমানে গমের দাম স্থিতিশীল। দীর্ঘদিন পর রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন থেকে গম আমদানি সহজ হয়েছে। দীর্ঘ যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী গমের সরবরাহ বাড়িয়েছে দেশ দুটি। বর্তমানে দেশে আটা-ময়দার দাম নিম্নমুখী হওয়ার কথা। কিন্তু দাম না কমে দেশের প্রধান প্রধান ফ্লাওয়ার মিল কোম্পানিগুলো আটা-ময়দার দাম বাড়িয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ।

সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে একজন দিন মুজুর বলেন, আগে মোটামুটি আসছিল কিন্তু এখন আর সরকার যাওয়ার পর কিছুই আসে নাই ।এখন ভাতও খাইতে পারি না ।প্রতিদিনের কোন হিসাব নাই কালকে পাইছি দুইশ,তাও চার দিন পরে ।আজকে আর কত পাবো সেটা আল্লাহ জানে ।

বাজারে এক ক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,পয়সা ওয়ালারা কিনতে পারছে ,কিন্তু আমাদের কেনার সামার্থ্য নেই ।সরকারের তো চার মাস পাড় হয়ে চলে যাচ্ছে ,কখন পারবে  সমস্যা সমাধান করতে?

বাজারে আরেক ক্রেতা বলেন, সাধারন পাবলিকের কথা চিন্তা করে তারা যদি মনে করে তারা দেশ চালাবে,,হতো তারা ভাল করতে পাবে ।এটাই আশা করি।

চালের পর দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। দেশে কমবেশি ১০ লাখ টন উৎপাদন হলেও বাদবাকি ৪৫-৫০ লাখ টন গম বিশ্ববাজার থেকে আমদানি হয়। সরকারি ভাবে গম আমদানি হয় চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বাকি চাহিদা পূরণ হয় দেশের মুষ্টিমেয় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের আমদানির উপর। যেখানে আমদানির সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শীর্ষস্থানে রয়েছে এস আলম গ্রুপ। দেশের সংকটময় মুহুর্ত গুলোতে এগিয়ে আসা সেই এস আলম গ্রুপ আজ নিজেই নানান সংকটের মুখোমুখি।

শুধু গম-ই নয়, তেল, চিনি থেকে শুরু করে ছোলা, পেয়াজসহ আরো নানান ভোগ্যপণ্যের সংকট মোকাবেলায় কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি কি সব সংকট কাটিয়ে আবারো পণ্য আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করতে পারবে? সেটিই এখন বড় প্রশ্ন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *