নিজস্ব প্রতিবেদক: নাজমে নওরোজ, চট্টগ্রামের এক নারী ব্যবসায়ী, যিনি ফুসকার দোকান দিয়ে তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন, আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফাঁসিয়ে এবং ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি নিজের ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়েছেন। বর্তমানে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এবং ঋণের বিপরীতে চেক ডিজঅনারের …
ঋণ কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রামে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়েছেন এক নারী!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাজমে নওরোজ, চট্টগ্রামের এক নারী ব্যবসায়ী, যিনি ফুসকার দোকান দিয়ে তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন, আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফাঁসিয়ে এবং ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি নিজের ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়েছেন। বর্তমানে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এবং ঋণের বিপরীতে চেক ডিজঅনারের অভিযোগ রয়েছে। তবে, এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হলো, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জাল সই, অপব্যবহার এবং সহায়কের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ।
ব্যবসার শুরু: ফুসকার দোকান থেকে ‘লা এরিস্টোক্রেসি’
নাজমে নওরোজ তার ব্যবসা জীবন শুরু করেছিলেন একটি সাধারণ ফুসকার দোকান দিয়ে। তবে দ্রুত সময়ে তার ব্যবসা বিস্তার লাভ করে এবং চট্টগ্রামের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ চালু করেন। ব্যবসা পরিচালনায় তার সফলতা, একদিকে যেখানে অনেকের কাছে প্রশংসিত ছিল, অন্যদিকে অপরদিকে ব্যাংক ঋণের জালিয়াতির মাধ্যমে তার উত্থানও সম্ভব হয়েছে।
নাজমে নওরোজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরিতে সাহায্য করেছে তার কৌশলী ঋণ গ্রহণ এবং জাল সইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা। তিনি এবং তার সহযোগীরা এই ঋণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন এমনভাবে, যা অনেক ব্যবসায়ীকে বিভ্রান্ত করেছে এবং ফাঁসিয়ে ফেলেছে।
ঋণের কেলেঙ্কারি: নাজমে নওরোজের প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা পাওনা
নাজমে নওরোজের দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠান রয়েছে— নীলিমা নীল এগ্রো লিমিটেড এবং নওরোজ এন্টারপ্রাইজ। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
- নীলিমা নীল এগ্রো লিমিটেড:
২০১৫ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা কৃষি ঋণ নেওয়া হয়। এই ঋণ গ্রহণের সময়, ব্যাংক থেকে অর্থ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক এবং স্টোর কিপারের নাম ব্যবহার করা হয়। এই জালিয়াতি প্রক্রিয়ায় তাদের অজ্ঞাতেই সই জাল করে ঋণ নেওয়া হয়। বর্তমানে, নীলিমা নীল এগ্রো লিমিটেড ব্যাংকের কাছে ২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। - নওরোজ এন্টারপ্রাইজ:
একইভাবে, নওরোজ এন্টারপ্রাইজ-এর প্রতিষ্ঠাতা নাজমে নওরোজ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। তবে ঋণ নেয়ার সময়, ব্যাংকের একজন নারী পিয়ন ও তার স্বামীকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে যোগ করার মাধ্যমে এই ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। বর্তমানে, এই প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যার বিপরীতে জমি এবং একটি ফ্ল্যাট জামানত রাখা হয়েছে।
‘লা এরিস্টোক্রেসি’: কৌশলে ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয় ৫৯ কোটি টাকা
২০০৮ সালে নাজমে নওরোজ ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ নামক রেস্তোরাঁ চালু করেন। প্রথম দিকে, এটি সফলভাবে ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে ঋণের ভারে তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রেস্তোরাঁটি প্রথমে এসএস খালেদ রোডে খোলা হলেও, একাধিকবার স্থানান্তরিত হয়ে ২০২৪ সালে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এই রেস্তোরাঁর ঋণ ২০১৯ সালে দাঁড়ায় ৫৯ কোটি টাকা, যা বর্তমানে সুদসহ ১১৬ কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে ৯ কোটি টাকার জমি জামানত রাখা হলেও, তার প্রকৃত মূল্য অনেক কম বলে স্বীকার করেছেন নাজমে নওরোজ নিজেই। এই ঋণের বিপরীতে গোপনীয়তার সাথে একাধিক অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও শঙ্কিত।
চেক ডিজঅনার ও মামলা: ভিকটিম সাজছেন নওরোজ
নাজমে নওরোজের বিরুদ্ধে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক চেক ডিজঅনারের ১৫টি মামলা দায়ের করেছে। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট একটি ২ কোটি টাকার চেক ডিজঅনার হয়। এই চেকটি ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ রেস্তোরাঁ থেকে ইস্যু করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যাংকে যথেষ্ট অর্থ না থাকায় তা ডিজঅনার হয়ে যায়। এ ছাড়াও এক ডজনেরও বেশি চেক ডিজঅনার বা প্রত্যাখানের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এছাড়া, ব্যাংকের কোর্ট মামলায় জামিনে থাকার পরও নাজমে নওরোজ দাবি করেছেন যে, তিনি নিছক একজন ভিকটিম এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের আত্মীয়দেরও এই ঋণ জালিয়াতির সুবিধাভোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, অথচ সমস্ত দায়ভার এককভাবে তার ওপর চাপানো হয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অবস্থান: অনিয়মের স্বীকারোক্তি
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জোনাল হেড (নর্থ) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান স্বীকার করেছেন যে, নাজমে নওরোজের ঋণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং বিষয়টি শাখাগুলোর মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। এর ফলে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঋণের আদায় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নাজমে নওরোজের বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি ও চেক ডিজঅনারের অভিযোগগুলো যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা একটি বিশাল অর্থনৈতিক দুর্নীতির চেহারা নিতে পারে। যদিও নাজমে নওরোজ নিজেকে ভিকটিম হিসেবে দাবি করছেন, তবে ব্যাংকের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এসব অভিযোগের পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত কৌশল এবং জালিয়াতি।
Subscribe to Our Newsletter
Keep in touch with our news & offers










