অনলাইন ডেক্স: ম্যাকলিন চাকমার জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলঙের হাজাছড়া গ্রামে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে, ছড়ার পানিতে ভেসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি।
তাঁর শৈশব কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ছোটবেলাতেই পাহাড়ি ছড়ায় নৌকায় চেপে দুই–তিন কিলোমিটার দূরে স্কুলে যাতায়াত ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। ২০০১ সালে হাজাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর বরুনাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, যা বাড়ি থেকে ৩–৪ কিলোমিটার দূরে। মাধ্যমিকের জন্য পরিবার থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি পাহাড়ের বাতিঘর খ্যাত মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকেই মাধ্যমিক পাস করে ঢাকার মার্টিন লুথার কলেজে উচ্চমাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
মোনঘর থেকেই ম্যাকলিনের লেখালেখি শুরু। পাহাড়ি জীবন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং আদিবাসীদের অস্তিত্ব নিয়ে তাঁর লেখা বই ‘নুও গোরি ফাগুন এঝের’ বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য কোর্সের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালের মার্চে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম তাঁকে এই সুখবর জানান। ম্যাকলিন আশা করেন, আদিবাসী সাহিত্য–সংস্কৃতি সম্পর্কে বাঙালি সমাজ বিশদভাবে জানবে।
ম্যাকলিনের শৈশব কেটেছে ভারত সীমান্তবর্তী হরিণামৌনের পাহাড়ি এলাকায়। নানা–নানির জুম চাষে সহায়তা করার সময় থেকেই পাহাড়কে রূপসী, সংগ্রামী, ও প্রেমিকারূপে কল্পনা করা শুরু করেন তিনি। এখান থেকেই লেখালেখির ভাবনা আসে। চাকমা ভাষায় তাঁর তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলায় কবিতা, ছোটগল্প, ও গান রচনা করেন তিনি। চাকমা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন ম্যাকলিন।
পাহাড়ে আদিবাসীদের জীবন সংগ্রামের। শিক্ষার সুযোগ সীমিত, সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চা সীমাবদ্ধ। ম্যাকলিন বিশ্বাস করেন, সরকার যদি আদিবাসীদের অধিকার, সংস্কৃতি, ও সাহিত্য চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আরও এগিয়ে যাবে। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে তিনি পাহাড়ের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে চান।








