ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় ১০টি দাবানলের মধ্যে ৮টি ঘটেছে গত পাঁচ বছরে।

 

অনলাইন ডেক্স:ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া। নিয়মিত দাবানলের মুখোমুখি হওয়া এই অঙ্গরাজ্যে গত কয়েক দশকে এর প্রকোপ আরও বেড়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার মতে, গ্রীষ্মের দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুম ও উষ্ণ বসন্ত মৌসুমের কারণে দাবানলের মৌসুম আগেভাগে শুরু হচ্ছে এবং দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস জানিয়েছে, ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দাবানলের কারণ মানুষ, যদিও বেশিরভাগই অনিচ্ছাকৃত—যেমন ক্যাম্পফায়ার থেকে আগুন ঠিকমতো না নেভানো বা বৈদ্যুতিক তার থেকে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি। দ্রুত নগরায়ণ ও প্রাকৃতিক অঞ্চলে মানুষের বসতি স্থাপনও দাবানলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০টি দাবানলের মধ্যে ৮টিই গত পাঁচ বছরে ঘটেছে।

২০২০ সালে বজ্রপাত থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দাবানলের সূত্রপাত হয়, যা চার মাস ধরে চলেছিল। এতে পুড়ে যায় ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ একর ভূমি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি মার্কিন ডলার।

২০২১ সালে ডিক্সি দাবানলে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৯ একর ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয় এবং এটি ১০৫ দিন ধরে চলেছিল।

ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে ২০১৮ সালে একই সময়ে শুরু হওয়া দুটি দাবানলকে একত্রে মেনডোসিনো কমপ্লেক্স বলা হয়। এই দুটি দাবানলের নাম ছিল রিভার ফায়ার্যাঞ্চ ফায়ার। ২৭ জুলাই দাবানলের খবর প্রথম প্রকাশিত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আসে ১৮ সেপ্টেম্বর। তবে আগুন পুরোপুরি নিভতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগে। দাবানল দুটি ৪ লাখ ৫৯ হাজার ১২৩ একর ভূমি ধ্বংস করে। এতে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন।

এসসিইউ (স্যান্টা ক্লারা ইউনিট) লাইটনিং কমপ্লেক্স দাবানলের সূত্রপাত ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট বজ্রপাত থেকে। দাবানলটি স্যান্টা ক্লারা, আলামেডা, কন্ট্রা কোস্টা, সান জোয়াকুইন, মারসেড ও স্ট্যানিসলাউস কাউন্টির ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪ একর ভূমি পুড়িয়ে দেয়। কেউ প্রাণ হারাননি, তবে আহত হন ৬ জন। দাবানলটি ১ অক্টোবর নিয়ন্ত্রণে আসে।

২০২০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যাঞ্চলে সিয়েরা ন্যাশনাল ফরেস্ট এবং মাডেরা কাউন্টিতে ভয়াবহ দাবানল শুরু হয়। ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই দাবানল ২৪ ডিসেম্বর শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৫ একর ভূমি ধ্বংস হয় এবং ৮৫৬টি অবকাঠামো পুড়ে যায়। কেউ নিহত না হলেও আহত হন ২৬ জন। আগুনের সঠিক কারণ জানা যায়নি।

২০২০ সালের ১৬ আগস্ট, ভোর থেকেই উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি অস্বাভাবিক বজ্রঝড় শুরু হয়, যা ৭২ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৮৪৯টি বজ্রপাত ঘটায়। এসব বজ্রপাতের কারণে ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে প্রায় ৩৭৬টি স্থানে ছোট-বড় দাবানলের সৃষ্টি হয়। এলএনইউ (সোনোমালেকনাপা ইউনিট) লাইটনিং কমপ্লেক্স দাবানলে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২০ একর ভূমি পুড়ে যায়। এতে ছয়জন প্রাণ হারান এবং পাঁচজন আহত হন।

২০২০ সালের ১৭ আগস্ট বজ্রপাতের কারণে প্লুমাস জাতীয় উদ্যানের ২১টি স্থানে দাবানল শুরু হয়, যা নর্থ কমপ্লেক্স ফায়ার নামে পরিচিত। ১০৯ দিন ধরে চলা এই দাবানল ৩ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৫ একর ভূমি পুড়ে যায়। প্রাণ হারান ১৬ জন এবং আহত হন শতাধিক মানুষ।

২০১২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম বড় দাবানল রাশ ফায়ার লাসেন কাউন্টি থেকে শুরু হয়ে নেভাদা অঙ্গরাজ্যের ওয়াশু কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। দুই অঙ্গরাজ্যে মিলে এই দাবানল ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৭ একর ভূমি পুড়িয়ে দেয়। এটি ১২ আগস্ট শুরু হয়ে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত জ্বলে। ১৯৩২ সাল থেকে দাবানলের হিসাব রাখার মধ্যে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে স্থান পায়।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় একাধিক দাবানলের মধ্যে অন্যতম ছিল টমাস ফায়ার। এটি ভেন্টুরা ও স্যান্টা বারবারা কাউন্টিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুড়িয়ে দেয় প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৩ একর ভূমি। দাবানলটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানলগুলোর একটি ছিল সিডার ফায়ার, যা ২০০৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে সান ডিয়েগো কাউন্টিতে ঘটে। এই দাবানলে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৬ একর ভূমি ধ্বংস হয়। ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানলটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩ হাজার ৬০০ একর। ৪ নভেম্বর দাবানলটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এর আগে ২ হাজার ৮২০টি অবকাঠামো ধ্বংস হয় এবং ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীও ছিলেন।

তথ্যসূত্র: ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্টি অ্যান্ড ফায়ার প্রটেকশন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *