দরপতনে বিপাকে পাবনার সবজি চাষিরা

অনলাইন ডেক্স: পাবনায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজি উৎপাদনকারী অঞ্চলে শীতকালীন সবজির ভালো ফলন চাষিদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছিল। তবে, চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় ফুলকপি ও অন্যান্য সবজির দর অব্যাহতভাবে পতিত হওয়ায় সেই স্বস্তি এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনেক চাষি উৎপাদনের খরচও উঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ফুলকপি চাষিদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। তারা জানাচ্ছেন, এই মৌসুমে প্রতি ফুলকপি উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১০ টাকার বেশি, কিন্তু বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকায়। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী এলাকার কৃষক মেহেদি হাসান জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। প্রতিটি বিঘায় উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা, আর প্রতি বিঘা থেকে ৬ হাজার ফুলকপি পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৫ হাজার পিস বিক্রি করা যায়। এভাবে প্রতি পিস ফুলকপির উৎপাদন খরচই দাঁড়ায় ১০ টাকার ওপর, কিন্তু এখন প্রতিটি ফুলকপিতে চাষিদের ৪-৫ টাকার লোকসান হচ্ছে।

ফুলকপি ছাড়াও, অন্যান্য শীতকালীন সবজির দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। ঈশ্বরদীর দাশুরিয়া এলাকার কৃষক মো. শরিফ হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন, যার খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এই পরিমাণ জমি থেকে অন্তত ২০০ মণ বেগুন পাওয়ার কথা। তবে, এখন বাজারে প্রতি মণ বেগুণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায়, এবং দাম আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। ফলে, তার উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

ফুলকপি ও বেগুন চাষিদের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছেন গাজর চাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হলেও গাজর এখন পাইকারিতে ১ হাজার থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। গাজর চাষি মো. রাকিব বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গাজর চাষের খরচ ৫০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমি থেকে ৮০ থেকে ১০০ মন গাজর পাওয়া যায়, যার ফলে গাজর চাষিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। তবে, অন্য সবজির লোকসান পোষাতে লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে।

পাবনার পাইকারি সবজি বাজারে সরবরাহ যথেষ্ট থাকলেও ক্রেতা কম, যার ফলে দাম পড়ে গেছে। ঈশ্বরদীর জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলি বাদশা জানান, শীতকালীন মৌসুমে প্রতি বছর ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক সবজি সরবরাহ হতো, তবে এ বছর মাত্র ৫০ ট্রাক সবজি সরবরাহ হচ্ছে। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন, গত বছর সবজির দাম বেশি ছিল, তাই কৃষকরা এ বছর আরও বেশি সবজি আবাদ করেছেন, যার কারণে সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দাম কমে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান জানান, পাবনায় শীতকালীন বা রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে এবং চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। তবে, একসঙ্গে সব সবজি বাজারে আসায় সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *